বাবা সরকারী কর্মকর্তা এবং ব্রাজিলের সমর্থক। আমার বেসরকারি জবে থাকা এমনিতেও ওনার পছন্দ ছিল না। এইবার একদম পেয়ে বসলেন। হাইকোর্ট থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হল - ধুম্রপান ত্যাগ করা হবে এই শর্তে আরো ছয় মাস দেয়া হবে। এর মধ্যে কোন কিছু কনফার্ম না হলে সরকারী সার্কুলারগুলায় সিরিয়াসলি চেষ্টা করতে হবে। আর সবচে ভাল হয় যদি উচ্চশিক্ষার চিন্তা বাদ দিয়ে নিম্নমাধ্যমিক শ্রেণীর গনিতবই, সাধারণে জানে না এমন সাধারণ জ্ঞান আর গোপালগঞ্জের ভূগোল গলাধঃকরণ করে বিসিএস দিয়ে দেই। দেশে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা এতই চমৎকার যে শুধু প্রশাসনের লোক হলেই আমি নিজেকে প্রশাসনের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারব - নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করা হল। কিন্তু এসব কথাবার্তায় আমি খুব একটা প্রভাবিত হলাম না। বুঝে গেলাম, দেয়ালে পিঠ থেকে গেছে তাই পিঠ দিয়েই দেয়াল ভাঙ্গার চেষ্টা করতে হবে! জব থেকে সন্ন্যাস নিয়ে সামার (২০১৮) সেমিস্টারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করলাম (ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হবে)।
সামারে আবেদন করার সুযোগ কম, বেশিরভাগ কোর্স উইন্টারে শুরু হয়। ডাডের পোর্টাল থেকে গুনেগুনে ১১টা কোর্স শর্টলিস্ট করলাম, এর মধ্যে ৫টা কোর্স খুবই পছন্দ হল। গণহারে সব ভার্সিটিতে ইমেইল করে জানিয়ে দিলাম, আমি ইখতিয়ার বিন বখতিয়ার খিলজি - কত লক্ষণ সেন আমার ভয়ে লাঞ্চ করা ভুলে যায়! - এখন তোমার ভার্সিটির ঐ কোর্সে আমার নজর, হাহা! নিজের পরিচয় ও একাডেমিক প্রোফাইল শেয়ার করে সুন্দর ও মার্জিতভাবে কোর্স রিলেটেড দুয়েকটা প্রশ্ন করে নিজের আগ্রহের জানান দিলাম। কিছু ভার্সিটি থেকে রবোটিক রিপ্লাই আবার কয়েকটি থেকে প্রফেসরের ব্যক্তিগত ইমেইলও পেলাম। প্রফেসররা কোর্সের মড্যুল ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কসসহ কি কি টপিকসে তারা রিসার্চ করছেন তা সংক্ষেপে জানালেন এবং আবেদন করতে বললেন। দুইটা রিকোমন্ডেশন লেটারের জন্য ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র প্রফেসরদের হাসির খোরাক হওয়া আমি ভিনদেশী প্রফেসরদের একটু দয়াদৃষ্টিতেও দারুনভাবে অনুপ্রাণিত হলাম। সম্পূর্ণ ব্যাপারটাকে একটা পজিটিভ ভাইভ হিসেবে গ্রহণ করে আবেদন করা শুরু করলাম।
উইন্টারে ব্যার্থ হওয়ার মূল কারণই ছিল সঠিক প্ল্যান না থাকা। ইউনি-এসিস্টের পুরো প্রক্রিয়াটা খুব ঝামেলা মনে হওয়ায় সেবারে ইউনি-এসিস্টের মাধ্যমে কোন আবেদনই করিনি। এবার সে ভুল করলাম না, ইউটিউবে ইউনি-এসিস্টে আবেদন প্রক্রিয়ার অনেক ভিডিও দেখলাম, বিসাগের ব্লগ ও ট্যাগ অনুসারে গ্রুপের প্রায় সকল পোস্ট পড়লাম এবং সবচে যেটা গুরুত্বপূর্ণ ইউনি-এসিস্টের ওয়েবপেজে দেয়া গাইডলাইন ও ফ্যাক ভালভাবে পড়লাম। ডিরেক্ট এপ্লাইয়ের কোর্সগুলোর জন্য আলাদা ফাইলে সবকিছু গুছিয়ে আগেই রেখেছিলাম। ইউনি-এসিস্টের আবেদনগুলোতে বেশি সময় দিলাম এবং অনেককিছু নিয়ে ধারণা থাকা সত্ত্বেও নিজের আবেদনের সময় বেশ কিছু সমস্যার পড়েছিলাম যেখানে আমি বিসাগের সাহায্য নেই এবং প্রতিবারই ইউনিএসিস্টকে ইমেইল করি। এভাবে করে ডেডলাইনের অনেক আগেই পুরো আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করলাম।
আগেই জব ছেড়ে দেয়ায়, পুরদস্তুর বেকার মানুষ। দুটা ভার্সিটির ডিরেক্ট আবেদন দেরিতে ছিল, সেটা শেষ করতেই চরম দুশ্চিন্তা আর অলস ঘড়ির কাঁটা আঁকড়ে ধরল। কোথাও ভুল করলাম না তো! সাপ ছিল না লাঠি ছিল! - সাত পাঁচ চিন্তা মাথায় থাকায় অন্য কিছুতেই মন দিতে পারলাম না। ডিসেম্বরে ইউনি-এসিস্ট মেইল করে জানিয়ে দিল ফ্লেনসবুর্গের উইন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে করা আমার আবেদন তারা ফরোয়ার্ড করছে না, কারণ আমার চার বছরের ব্যাচেলর নাকি জার্মানির তিন বছরের সমতুল্য। গাঁইগুই করেও কোন লাভ হলো না। এদিকে ভিপিডি থাকা সত্ত্বেও ইঙ্গোলস্টাটে এপ্লাই করতে পারি নি। দেয়ালে চির ধরার আগেই পিঠই ভেঙ্গে যাচ্ছে, এমন অবস্থা!
... অবশেষে অপয়া ঐ বছর শেষ হল। ২০১৮ সাল, প্রথম সুখবর পেলাম জানুয়ারির ৪ তারিখে। স্কুলে থাকতে বায়ুচাপ নিয়ে উদ্ভট এক এক্সপেরিমেন্টের কথা পড়েছিলাম। সেই বিজ্ঞানীর নামে এই ভার্সিটি, মাগদেবুর্গের অটো-ফন-গেরিক ইউনিভার্সিটি!
(চলবে)